মৃতকাশৌচ
মনু সংহিতা বলেছেন,
‘দশাহং শাবমাশৌচ সপিণ্ডেষু বিধীয়তে ।’ ( ৫ম অধ্যায়, ৫৯ শ্লোক)
অর্থাৎ ‘সপিণ্ডের মৃত্যু হলে দশাহ অশৌচ জানবে ।’
ব্রাহ্মণের বেদজ্ঞান ও অগ্নিচর্যা বিবেচনায় তিন কিংবা এক অহোরাত্র মাত্র অশৌচ বিহিত । সর্বগুণ-বিরহিত ব্রাহ্মণের পক্ষেই দশাহ অশৌচ বিহিত । সর্বগুণ-বিরহিত ব্রাহ্মণ শূদ্রতুল্য বলেই আজও হিন্দু সমাজে শব্দকর ও নমঃশূদ্র দশদিন অশৌচ পালন করে থাকে ।
মনু বলছেন, --
‘সর্ব্বেষাং শাবমাশৌচং মাতাপিত্রোস্তু সূতকম্ ।
সুতকং মাতুরেব স্যাদুপস্পৃশ্য পিতা শুচিঃ ।।’ ( ৫ম অধ্যায়, ৬২নং শ্লোক)
এখানে বলা হয়েছে, মৃতাশৌচে অস্পৃশ্যরূপ অশৌচ সকলেরই সমান । কিন্তু জননাশৌচে কেবল মাতা-পিতারই অস্পৃশ্যত্ব হয় । এই অস্পৃশ্যত্বরূপ অশৌচ মাতার দশ রাত্রি হয়ে থাকে কিন্তু পিতা স্নান করিলেই স্পর্শনীয় হন ।’
একই অধ্যায়ের ৮৪নং শ্লোকে বলছেন, ‘অশৌচের দিনসংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত নয় ।’
মাঝখানে ৮০নং শ্লোকে দেখা যায় ভিন্ন সুর যা পূর্ব ও পরের শ্লোকের সাথে আদৌ সঙ্গতিপূর্ণ নয় । সহজেই অনুমেয় যে এটা পরবর্তীঅ সময়ে প্রক্ষিপ্ত আকারে গ্রন্থে সন্নিবেশিত করা হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ দশ দিবসে, ক্ষত্রিয় দ্বাদশ দিবসে, বৈশ্য পঞ্চদশ দিবসে ও শূদ্র একমাসে শুদ্ধ হয় ।
এই শ্লোকটি বহু পরে কুল্লুক ভট্ট রচনা করে মনুর নামে চালিয়ে দেবার অপপ্রয়াস করেছেন । হ্যাঁ, এটা আজও ধরা পড়তো না যদি কুল্লুক ভট্ট আগে পিছের শ্লোতগুলোকে উধাও করে দিতে পারতেন ।
তারপর আসুন গরুড় পুরাণে । সেখানেও দেখা যায় একই প্রতিধ্বনি । বলা হয়েছে -
‘দশাহং শাবমাশৌচং সপিণ্ডেষু বিধীয়তে ।
জননেহপ্যেষমেব স্যান্নিপুণং শুদ্ধিমিচ্ছতাম ।।’ (উত্তর খণ্ড, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, ১০নং শ্লোক)
এখানেন বলা হলো, সপিণ্ডদের মরণাশৌচ দশদিন, যারা নিপুণভাবে শুদ্ধি আকাংখা করেন, তারা জননেও ( সন্তান জনমে ) দশাহ অশৌচই পালন করবেন ।
শুদ্ধিচিন্তামণি তত্বগ্রন্থেও বলা হয়েছে, -
‘অশৌচং দশরাত্র্যান্তু সর্ব্বপাপঃ হরে বিদুঃ ।
ইত্যেব সর্ব্ববর্ণানাং দশরাত্র্যাশৌচম্ মুক্তম্ ।।
তত্তু সর্ব্ব কর্ম্ম নিরত ধর্ম্মমাত্র পরকাম ।
লোভাদিহীন ক্ষত্রিয় বৈশ্যা শূদ্রাপরঃ ।।’
- দশরাত্র অশৌচে জ্ঞানী সর্বপাপ হতে মুক্ত হন । সর্ববর্ণের মুক্তির জন্য দশরাত্র অশৌচই যুক্তিযুক্ত ।
মনু আরও বলেছেন, দশাহ অশৌচের মধ্যে পুনর্বার যদি কোন জনন বা মরণাশৌচ হয়, তাহলে প্রথমাশৌচের সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় অশৌচ শেষ হয়ে থাকে । (৫/৭৯)
শাস্ত্র বলেছেন, ইহলোকে মানুষ যা খায়, তাই দিয়েই পিণ্ড দিতে হয় ।
‘বিষ্ণুধর্মে’ উক্ত আছে, -
‘প্রাণেভ্যো জুহুয়াদন্নং মন্নিবেদিতমুত্তমং ।
তৃপ্যন্তি সর্ব্বদা প্রাণা মন্নিবেদিতভক্ষণাৎ ।।
তস্মাৎ সর্ব্বপ্রযত্নেন প্রদেয়ং মন্নিবেদিতম্ ।
মমাপি হৃদয়স্তস্য পিতৃণাঞ্চ বিশেষতঃ ।।
ভক্ষ্যং ভোজ্যঞ্চ যৎকিঞ্চিদনিবেদ্যাগ্র-ভোক্তরি ।
ন দেয়ং পিতৃদেবেভ্যঃ প্রায়শ্চিত্তি যতো ভবেৎ ।।’
অর্থ - মদুদ্দেশ্যে নিবেদিত উত্তমান্ন প্রাণসমূহে আহুতিপ্রদান করিবে, মদুদ্দেশ্যে নিবেদিত দ্রব্য ভোজনে নিজের প্রাণাদি বায়ুসমূহ প্রীতি লাভ করে । অতএব যত্ন সহকারে প্রত্যেকের হৃদয়াধিষ্ঠিত পরমাত্মারূপ আমাকে. অধিকন্তু পিতৃবর্গকে মদুদ্দেশ্যে নিবেদিত অন্ন অর্পণ করিবে । প্রথমতঃ অগ্রভুক্ ভগবানকে কিছু ভক্ষ্য না দিয়া পিতৃগণের উদ্দেশ্যে দিতে নাই ; কারণ, অনিবেদিত মদ্রব্য অর্পণ করিলে প্রায়শ্চিত্ত করিতে হয় ।’
Comments
Post a Comment