শ্রাদ্ধ-বাসরে প্রধান আরাধ্য-দেবতার বর্ণনাসহ শ্রাদ্ধ-বাসরে ব্রহ্ম-ভুজ্যি/ভুরি ভোজনের ব্যাখ্যা, নিরামিষ বা আমিষ আহার প্রসঙ্গে - ৪

অতএব উপরোক্ত শাস্ত্র-বচনানুসারে শ্রাদ্ধে অবশ্যই নিরামিষ আহারের ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ।
তৃতীয় আলোচ্য বিষয়টি হলো, মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া একাদশী তিথিতে পড়লে অন্নগ্রহণ বা দান করা প্রশস্ত কি না ।
পদ্মপুরাণে পুষ্করখণ্ডে লিখিত আছে,-
“একাদশ্যাং যদা রাম শ্রাদ্ধং নৈমিত্তিকং ভবেৎ ।
তদ্দিনে তু পরিত্যাজ্য দ্বাদশ্যাং শ্রাদ্ধমাচরেৎ ।।”
- হে রাম ! উপবাস দিবসে নৈমিত্তিক শ্রাদ্ধ উপস্থিত হইলে তদ্দিন বর্জন পূর্বক দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ করতে হয় ।

উক্ত পুরাণের উত্তরখণ্ডে লিখিত আছে যে,
“একাদশ্যাস্তু প্রাপ্তায়াং মাতাপিত্রোর্মৃতেহহনি ।
দ্বাদশ্যাং তৎ প্রদাতব্যং নোপবাসদিনে ক্কচিৎ ।।”
- মাতাপিতার মৃতাহে একাদশী হলে দ্বাদশীতে শ্রাদ্ধ কর্তব্য । কদাচ উপবাসাহে শ্রাদ্ধ করবে না । কারণ, দেবতারা বা পিতৃলোকেরা নিন্দিতান্ন সেবন করেন না ।

স্কন্দপুরাণে লিখিত আছে, -
“একাদশী যদা নিত্যা শ্রাদ্ধং নৈমিত্তিকং ভবেৎ ।
উপবাসং তদা কুর্য্যাদ্বাদশ্যাং শ্রাদ্ধমাচরেৎ ।।”
- নিত্যস্বরূপিণী একাদশীতে নৈমিত্তিক শ্রাদ্ধ সমুপস্থিত হলে একাদশীতে উপবাসী থেকে দ্বাদশী-দিবসে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করবে ।

ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণে লিখিত আছে, -
“যে কুর্ব্বন্তি মহীপাল শ্রাদ্ধং ত্বেকাদশীদিনে ।
ত্রয়স্তে নরকং যান্তি দাতা ভোক্তা পরেতকঃ ।।”
- হে নৃপতে ! একাদশী দিনে শ্রাদ্ধ করলে দাতা, ভোক্ত ও প্রেত তিন জনেরই নিরয় গতি লাভ হয় ।

বিষ্ণুস্মৃতিতে লিখিত আছে , একাদশীতে আহার করা কদাচ মানবের কর্তব্য নহে ।

শৃঙ্গী ঋষির উক্তিতেও প্রকাশিত আছে যে, ঋতুমতী হলেও একাদশীতে ভোজন করা নারীজাতির অনুচিত ।

নারদীয় পুরাণে লিখিত আছে, হরিবাসরে আহার করলে ধরণীস্থ নিখিল পাতক-ভোজন হয়ে থাকে ।

স্কন্দপুরাণে লিখিত আছে, একাদশীদিনে আহার করলে মাতৃঘাতী, পিতৃঘাতী, ভ্রাতৃঘাতী ও গুরুহন্তা পাপী বলে পরিগণিত হতে হয় ; সে ব্যক্তি বিষ্ণুধাম হতে বিচ্যুত হয়ে পড়ে ।

বিষ্ণুধর্মেোত্তরে লিখিত আছে,   ব্রহ্মচারী,  গৃহী, বানপ্রস্থ বা যতী, যে কেহ হোক না, হরিবাসরে আহার করলে গোমাংস সেবন করা হয় ।

সনৎকুমারসংহিতায় লিখিত আছে যে, হে তাপসসত্তম ! একাদশী তিথিতে ও শ্রাদ্ধে আহার করলে প্রতি গ্রাসে মলমূত্রময় পাপভোজন হয়ে থাকে ।

বিষ্ণুরহস্যে লিখিত আছে, হরি-সহবাসে ও পুত্র-সম্পদাদি লাভে বাসনা হলে উভয়পক্ষীয় একাদশীতেই উপবাসী থাকবে ।

বরাহপুরাণে লিখিত আছে, সুতকাশৌচে স্নানান্তে মনে মনে হরিকে প্রণাম পূর্বক একাদশীতে আহার পরিত্যাগ করবে ; এই প্রকার করলে আর ব্রতলোপের সম্ভাবনা থাকবে না । আরও উক্ত আছে, মৃতকাশৌচে একাদশীতে আহার করা কদাচ মানবের কর্তব্য নহে ।

স্কন্দপুরাণের অমৃতসারোদ্ধারে যমদুতানুশাসনে ব্যক্ত আছে, চতুর্বেদী দ্বিজাতি যদি একাদশীতে আহার করে, তাহলে একাদশ্যুপবাসী চণ্ডালও তদপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ।

অতেএব উপরোক্ত শাস্ত্র-বচনানুসারে একাদশী তিথিতে শ্রাদ্ধ না করা, অন্নগ্রহণ বা দান না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত ।

Comments

Popular posts from this blog

সর্ববর্ণে দশাশৌচ

শ্রাদ্ধ-বাসরে প্রধান আরাধ্য-দেবতার বর্ণনাসহ শ্রাদ্ধ-বাসরে ব্রহ্ম-ভুজ্যি/ভুরি ভোজনের ব্যাখ্যা, নিরামিষ বা আমিষ আহার প্রসঙ্গে - ৩